“‘ বিলিভ ইট ওর নট ।’ কথা সত্য !”-পর্ব 12 - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

“‘ বিলিভ ইট ওর নট ।’ কথা সত্য !”-পর্ব 12

Print this post

আন্দিজ পর্বতের গায়ে অতি উচ্চে চাচাপোয়াস নামে একটি ছোট প্রস্তরীভূত জায়গা আছে । এক সময় এখানে মানব বসতি ছিল । একদিন আকস্মাত্‍ প্রকৃতির কোপ নেমে এসেছিল সহজ সরল উপজাতি রেড ইন্দিয়ানদের একটি অংশের ওপর । এক মাঝরাতে সবাই যখন ঘুমাচ্ছিল , তখন আকস্মাত্‍ সুপ্ত আগ্নেয়গিরি দীর্ঘ নিদ্রা ভেঙে জেগে ওঠে । মুহুর্তে বেরিয়ে আসে উত্তপ্ত গলিত লাভার স্রোত । ঐ স্রতো অসহায়ভাবে চাপা পড়ে গেল রেড ইন্ডিয়ানদের চাচাপোয়া উপজাতির সমস্ত মানুষ । ধ্বংস হয়ে গেল তাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি । সেই থেকে রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে জায়গাটি প্রতের রাজ্য নামে পরিচিত । আজো তারা জায়গাটিকে এড়িয়ে চলে ।

প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। কেউ বাসা থেকে পালিয়ে নতুন জায়গায় গড়ছেন নতুন জীবন। কেউবা আত্মহত্যা করে বিদায় জানাচ্ছেন এ পৃথিবীকে। আবার, আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে গুম হচ্ছেন অনেকেই। এসব মানুষের খোঁজ কোনোদিনই কেউ জানতে পারেন না। কিছু কিছু অন্তর্ধান সবার নজর কাড়ে। অনেক প্রশ্ন অনেক গবেষণাও চলে এসব অন্তর্ধান এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তেমনই শীর্ষ দশটি অন্তর্ধানের কথা জানাচ্ছি।

০১. এমিলিয়া ইয়ারহার্ট, ১৯৩৭

প্রথম নারী পাইলট হিসেবে আমেরিকার সম্মানজনক ফ্লাইং ক্রস লাভ করেছিলেন এমিলিয়া ইয়ারহার্ট। ১৯৩৭ সালে যখন তিনি নিখোঁজ হন তখন তার বয়স ৩৯ বছর। আকাশপথে নিউ গিনি হয়ে হাউল্যান্ড দ্বীপে যাবার পথেই নিখোজ হন এমিলিয়া। কারো সন্দেহ জাপানী আর্মীর হাতে বন্দি হন তিনি।কেউবা মনে করেন উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে মারাগেছেন। কিন্তু, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের সন্ধানও মেলেনি আজো। কিছু কিছু ১৯৭০ সালেরশেষ অব্দি পর্যন্ত কিছু সন্দেহবাদীর ধারণা ছিলো নাম পরিচয় পাল্টে আমেরিকার কোথাও হয়তো বসবাস করছেন এই পাইলট।

০২. জিমি হোফা, ১৯৭৫

জিমি হোফা ছিলেন আমেরিকান ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এবং লেখক। আন্তর্জাতিক ব্রাদারহুড টিমস্টার এর সাথে ১৯৩২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৫৮ সালথেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ছিলো প্রায় ১৫ লাখ। ১৯৭৫ সালের ৩শে জুলাই ব্লুমফিল্ড টাউনশিপ এর একটিরেস্টুরেন্ট স সামনে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। নিখোঁজ হবার সাত বছর পর ১৯৮২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে মৃতঘোষণা করা হয়। তার অন্তর্ধানের রহস্য আজোবের করাস সম্ভব হয়নি।

০৩. পার্সী ফশেট, ১৯২৫

ব্রাজিলের জঙ্গলে ‘লুকানো স্বর্ণের শহর’ খুঁজতে ১৯২৫ সালে সদলবলে বের হন ব্রিটিশ কর্ণেল পার্সী ফশেট। সাথে ছিলেন তার বড় ছেলে জ্যাক এবং বন্ধু র‌্যালে রিমেল। তারপরই উধাও হয়ে যান তিনজন। তাদের খুঁজতে গভীর জঙ্গলে অনেক দল গেছে। সেসব অভিযানেও বিভিন্ন সময়ে শতাধিক মানুষও মারা যায়। ব্রাজিলের জঙ্গল থেকে পার্সী ফশেট এর ব্যবহৃত কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার হলেও কোন খোঁজ মেলেনি পার্সী ফশেট আর দুই সঙ্গীর।

০৪. ডি বি কুপার, ১৯৭১

ড্যান কুপার নামে উড়োজাহাজের টিকেট করেছিলেন তিনি। কিন্তু, সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভুলবোঝাবুঝির কারণে ইতিহাসে তার নাম হয়ে যায় ডি বি কুপার। উড়োজাহাজ ছিনতাই এর অভিযোগে আজো তাকে খুঁজছে মার্কিনগোয়েন্দারা। ঘটনা শুনুন। ১৯৭১ সালের ২৪শে নভেম্বর।পোর্টল্যান্ড এবং সিয়াটলের মধ্য আকাশে একটি ৭২৭বোয়িং ছিনতাই করেন ডি বি কুপার। উড়োজাহাজেই দুই লাখ মার্কিন ডলার ছিনতাই করে প্যারাস্যূট দিয়ে লাফিয়ে পড়েন তিনি। তারপর থেকে ডিবি কুপারের হদিস পায়নি কেউ।

০৫. গ্লেন মিলার, ১৯৪৪ (বিখ্যাত জ্যাজ সঙ্গীত শিল্পীর অন্তর্ধান)

ডিসেম্বর, ১৯৪৪। .. ক্রিসমাস এর ১০ দিন আগে এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট উড়োজাহাজে ফ্রান্সে পাড়ি দিচ্ছিলেন গ্লেন মিলার। সেই যাত্রার শেষ কোথায়? জানা যায়নি কোনোদিন। আমেরিকান এই বিখ্যাত জ্যাজ শিল্পীর কোন হদিসও পায়নি কেউ আর। ধারণা করা হয়, জার্মানের বোন বোমারু উড়োজাহাজের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যায় তার জাহাজটি। তার ভাগ্যে যাই ঘটুক, গ্লেন মিলারের অন্তর্ধান আমেরিকান সঙ্গীত জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

০৬. চার্লস নানগীজার এবং ফ্রাঙ্কোইজ কোলি, ১৯২৭ (দুই পাইলটের অন্তর্ধান)

আকাশ পথে প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক। মাঝে পড়তে উত্তাল আটলান্টিক সমুদ্র। এখন প্রতিদিন এ পথে উড়োজাহাজের আনাগোনা হলে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত তো তা ছিলো স্বপ্নের মতো! কে আগে উড়ালপথে আটলান্টিক পাড়ি দিবে! তা নিয়ে চলছিলো দারুণ প্রতিযোগিতা। আর হ্যাঁ, এ সম্মান অর্জন করেছিলেন চার্লস লিন্ডবার্গ। কিন্তু, এ সাফল্যের কিছুদিন আগেই এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা হয় ফ্রান্সের পাইলটদের মধ্যে। প্যারিস থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিলেন দুই পাইলট। চার্লস নানগীজার এবং ফ্রাঙ্কোইজ কোলি। কিন্তু, নিউ ইয়র্কপৌছা হয়নি তাদের। মাঝপথেই হারিয়ে যান তারা। সমুদ্রে কিংবা পথের পাহাড়ি বনাঞ্চলে খুঁেজও উড়োজাহাজ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায়নি এই দুই ‘সাদা পাখির’ মৃতদেহ।

০৭. বিচারপতিজোসেফ ফোর্স ক্র্যাটার, ১৯৩০ (দূর্নীতিবাজ এক বিচারপতির অন্তর্ধান)

একদমই অপরিচিত নাম হলেও, তার সময় তিনি ছিলেন বহুল আলোচিত। বলছি বিচারপতি জোসেফ ফোর্স ক্র্যাটার এর কথা। ১৯৩০ সালের ৬ই আগস্ট হঠাৎই গায়েব হয়ে যান নিউ ইয়র্ক সিটির এই বিচারপতি। সাথে ছিলেন তার বান্ধবী Sally Lou Ritz। সে সময়কালে মাফিয়া গ্রুপগুলোর সাথে অনেক বিচারকেরই সম্পর্ক থাকার গুজব রয়েছে। তাই, কারো অনুমান মাফিয়া দলে ভীড়ে গেছেন তিনি। অনেকেই আবার বলতে লাগলেন, উন্নত জীবনের আশায় ধনসম্পদ লুট করে লুকিয়েছেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে। অনেক খোঁজা হলেও তার সন্ধান মেলেনি আর।

০৮. রাওল ওয়েলেনবার্গ, ১৯৪৫ (সুইডিশ নায়কের অন্তর্ধান)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরীর রাজধানী বুদাপেস্ট এ সুইডেনের বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিলো রাওল ওয়েলেনবার্গকে। এসময় তিনি ২০ হাজার হাঙ্গেরিয়ান ইহুদীকে হিটলার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাই, ইহুদীদের কাছে তিনি ছিলেন একজন মহানায়ক। সাবেক সোভিয়েত আর্মী হাঙ্গেরী দখল করার পর গ্রেফতার করা হয় রাওল ওয়েলেনবার্গকে। তার বিরুদ্ধে আনা হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ। তারপরথেকেই নিখোঁজ হয়ে যান এই দূত। ধারণা করা হয় সেখানথেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মস্কোর লুবইয়ানকা কারাগারে। এমনকি ২০০১ সালে সুইডেন-রাশিয়ার দশ বছরব্যাপী চলা যৌথ গবেষণার পর বলা হয় সম্ভবত ১৯৪৭ সালের ৭ই জুলাই তিনি মারা যান। কিন্তু, এর বেশি কোন তথ্য জানাতে পারেনি যৌথ এ গবেষকদল।

০৯. জন ক্যাবট, ১৪৯৯ (ইটালিয়ান অভিযাত্রী গুম)

ইউরোপ থেকে এশিয়ায় আসতে পশ্চিমের সমুদ্র পথের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন বিখ্যাত অভিযাত্রী জন ক্যাবট। ১৪৯৯ সালের এই অভিযানে তার সাথে ছিলো কাঠের তৈরী পাঁচটি জাহাজ। প্রতিটির দৈর্ঘ্য ছিলো ১০০ ফুট। কিন্তু, অভিযানে বের হবার পর জন ক্যাবট বা অন্য অভিযাত্রীদের আর সন্ধান মেলেনি। নিখোঁজ হবার দুই বছর আগে (১৪৯৭ সালে) ইউরোপের দ্বিতীয় অভিযাত্রী হিসেবে উত্তর আমেরিকায় পা ফেলেছিলেন জন ক্যাবট। এমনকি তাঁর জাহাজের ধ্বংসাবশেষ বা অন্য অভিযাত্রীদের লাশ পর্যন্ত আর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় প্রবলকোন ঝড়ে বা আইসবার্গে ধাক্কালেগে সবগুলো জাহাজ ধ্বংস হয়ে সবাই মারা যান। কারো বা সন্দেহ মারাত্মককোন অসুখে মারা যান একে একে সবাই। সন্দেহ যাইহোক, ছয়শ বছর পরও নিশ্চিত হওয়া যায়নি কি ঘটেছিলো বিখ্যাত অভিযাত্রী জন অ্যাবট বা তার সঙ্গীতের ভাগ্যে।

১০. হ্যারল্ড হল্ট (প্রধানমন্ত্রীর রহস্যময় অন্তর্ধান), ১৯৬৭

এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটে না। ঘটে না বছর বা এক যুগেও। ১৯৬৭ সালের ১৭ই ডিসেম্বর। সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড হল্ট গেলেন Portsea, Victoria এর নিকটবর্তী Cheviot Beach এ সাঁতার কাটতে। কিন্তু তার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। তাঁর সন্ধান মেলেনি আজো। তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো পাহাড়ি সব অঞ্চলে এবং সমুদ্রে। কিন্তু, কিছুতেই মিললো না এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের। ফলে বাড়তে লাগলো গুজবের ডালপালা।কেউ বলতে লাগলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কারো বা সন্দেহ স্ত্রীর প্রতি রাগ করে গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউবা সন্দেহ করলো, নিশ্চয় চাইনিজ সাবমেরিন অপহরণ করেছে। ১৯০৮ সালের ৫ই আগস্ট জন্ম হ্যারল্ড ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ১৭তম প্রধানমন্ত্রী। অনেক বছর তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ কেবিনেট মন্ত্রী। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ৩২ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন। তবে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের বয়স মাত্র ২২ মাস। কারণ তার পর থেকেই আর সন্ধান মেলেনি সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।

You can leave a response, or trackback from your own site.