পালসার বা নিউট্রন স্টার(Neutron star) কি? - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

পালসার বা নিউট্রন স্টার(Neutron star) কি?

Print this post

আচ্ছা যদি বলা হয় এক চামচ পদার্থের ওজন দশ কোটি টন!!!তাহলে কেমন শোনাবে?ভাবছেন, কি উল্টাপাল্টা বকছি তাই না?কিন্তু যতোই অবাক হন না কেন কথাটি পুরোপুরি সত্যি।নিউট্রন স্টার বা পালসার এর এক চামচ  পদার্থের ওজন এমনকি দশ কোটি টন পর্যন্ত হতে পারে।আসলে মহাবিশ্বে এমন বিস্ময়কর বস্তুর বোধহয় অভাব নেই।সত্যি কথা বলতে কি আমারা এখনো সৃষ্টিতত্ত্ব(cosmology) ও মহাবিশ্বের দুরতম অঞ্চলগুলো সম্পর্কে খুব কম ই জানতে পেরেছি।আচ্ছা চলুন এবার জানা যাক পালসার বা নিউট্রন স্টার আসলে কি?

 

পালসার সম্পর্কে বলতে গেলেআগে কিছু কথা বলে নিলে ভাল হয়।আমাদের সূর্যের মত নক্ষত্রগুলর জন্ম হয়েছে আন্তঃমহাকাশীয় গ্যাসীয় বস্তুর সঙ্কোচনের ফলে ।এসব গ্যাসীয় বস্তুর প্রধান উপাদান মুলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম।এসব গ্যাস এদের নিজ মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সঙ্কুচিত হতে থাকে।আর সঙ্কুচিত হতে থাকলে এদের ঘনত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে।ফলে উৎপর্ণ হয় প্রচণ্ড তাপ।সেটা যখন বেড়ে গিয়ে মোটামুটি গোটা দশেক মিলিয়ন ডিগ্রি পর্যন্ত হয় তখন শুরু হয় পারমাণবিক ফিউসান বিক্রিয়া।এ পক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ভেঙ্গে  হিলিয়াম ও হিলিয়াম ভেঙ্গে  হাইড্রোজেন তৈরি হয়।আর এই দুর্ধর্ষ বিক্রিয়ার ফলে আইনস্টাইনের E=mc২ সুত্র অনুসারে যে ভর খোয়া যায় তা পরিনত হয় বিপুল পরিমান শক্তিতে।এভাবেই তৈরি হয় নক্ষত্রগুলো।এসব নক্ষত্রের মধ্যে দুই ধরনের বল কাজ করে।একটি ভিতরের ফিউসান বিক্রিয়ায় তৈরিকৃত বিপুল পরিমান শক্তি নক্ষত্রের ভিতরের সমস্ত পদার্থকে বাইরের দিকে ঠেলছে।আর অন্যটি এই বিশাল বস্তুসম্ভার তাদের নিজের মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ভিতরের দিকে সংকুচিত হতে চাচ্ছে।এমতবস্থায় নক্ষত্রগুলো একটি সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে,তার নিজ শক্তি ও আলো বিতরন করতে থাকে।আমদের সূর্য ও এমন একটি সাম্যাবস্থায় আছে।এর বয়স ৫০০ বিলিয়ন বৎসর এবং সে আরও ৫০০ বিলিয়ন বৎসর এই রকম অবস্থায় থাকবে।ভাবছেন কিন্তু তারপর কি হবে?আসলে সকল নক্ষত্রের সাম্যাবস্থার বয়স এক না।এটি নির্ভর করে তার ভর কত তার উপর।যদি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ভরের ১.৫ গুন হয় তবে তা একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে তার বহিঃদেশ উড়িয়ে দেবে।এই বিস্ফোরণকে বলা হয় সুপারনোভা বিস্ফোরণ।বিস্ফোরণ এর পর পরে থাকে কেন্দ্রস্থ ভারি মৌলের কোঁর।কিন্তু নক্ষত্রের ভর যদি ৩.২ সৌরভরের বেশি হয় তবে তা তার কেন্দ্রস্থ চাপ সহ্য করতে পারে না।এ সীমাকে বলে ওপেনহাইমার-ভলকফ সীমা।যদিও এটি কোন সুনির্দিষ্ট ও সুসংজ্ঞায়িত সীমা না।তবে এটি নিশ্চিত যে যদি কোন নক্ষত্রের ভর ১.৫-৩ সৌরভরের মধ্যে হয় তবে এটি বিস্ফোরণে বাইরের স্তর উরে গিয়ে পরে থাকে সুধুমাত্র নিউট্রনের তৈরি একটি কেন্দ্রস্থ বস্তু বা কোর।এই কোর কোন পরমানু বা অনু দ্বারা গঠিত না, শুধুমাত্র নিউট্রন দ্বারা।এখানে প্রচণ্ড মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পরমাণুগুলো কোন অনু বা পরমানু হিসাবে না থেকে,একটি প্রোটন ও একটি ইলেকট্রন যুক্ত  হয়ে তৈরি করে একটি নিউট্রন।সাথে উপজাত হিসাবে তৈরি করে একটি ইলেকট্রন এন্ট্রি-নিউট্রিনো।

 

                                                                                      electron + proton → neutron + electron anti-neutrino

 

আর শুধুমাত্র নিউট্রনের ঠাসা এই বস্তুটির নামই নিউট্রন স্টার।এখন কথা হল কেন এখানের বস্তুর ওজন অসাভাবিক বেশি?এর উত্তর পাওয়া যাবে পরমানুর গঠনের মধ্যে।একটি পরমাণুর প্রায় সব ভরই  থাকে তার নিউক্লিয়াসে।কারন একটি পরমাণুর যা ভর তা হল তার প্রোটন আর নিউট্রনের মোট ভর।এখানে ইলেকট্রনের ভর তাদের মোট ভরের তুলনায় এত কম যে তা ধরার  দরকার পরে না।আর এই পুরো ভরটুকুই থাকে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে।কিন্তু দেখুন একটি পরমাণুর ব্যাস যেখানে ১০^-৮মিঃ সেখানে নিউক্লিয়াসের ব্যাস মাত্র ১০^-১৫মিঃ।তাহলে বুঝতে ই পারছেন পরমাণুর প্রায় পুরো জায়গাটাই ফাকা।এখন যদি পরমাণুর মধ্যে কোন ফাকা না থাকত তাহলে তার ভর প্রায় এক কোটি গুন বেড়ে যেত।কিন্তু নিউট্রন স্টার আসলে আরও বেশি ঘন।কেননা এখানে পরমাণুর মত ফাকা জায়গা তো নেই ই বরং পুরো নিউট্রন একটি আর একটির সাথে লেগে আছে ঠাসা ভাবে।পরমাণুর নিউক্লিয়াসেও নিউট্রন আর প্রোটনের মধ্যে কিছুটা ফাকা ছিল, কিন্তু এখানে তাও নেই।তাছাড়া অনুসমুহ যখন বস্তু গঠন করে তখন প্রচুর পরিমানে আন্তঃআনবিক ফাকা স্থান থাকে।আর নিউট্রন স্টার এ তো পরমানুই নেই। :P

তাই আমাদের চেনা জগতের বস্তুর তুলনায় নিউট্রন স্টার এত বেশি ঘন।এত বেশি ঘন যে, যার এক চামচ পরিমান পদার্থ পৃথিবীতে আনলে তার ওজন হবে দশ কোটি টন।এই নিউট্রন স্টারগুলো অবিরত রেডিও পালস নির্গত করে যাচ্ছে, তাই এর আর এক নাম পালসার।কিছু কিছু পালসারের স্পন্দন কাল এত বেশি নিখুত যে এটা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে  ভাল ঘড়ি বানান যাবে।সাধারনত এই তারাগুলোর ব্যাস ১০-৩০ কিঃমিঃ হয়ে থাকে।এর কেন্দ্রে রয়েছে সুপার ফ্লুয়িড(এটি শুধুমাত্র হিলিয়াম গ্যাস পরমশূন্য তাপমাত্রায় নিলে পাওয়া যায়)।আর এই কারনেই কোয়ার্ক কে হয়ত শুধুমাত্র এখানে ই নগ্ন অবস্থায় পাওয়া যাবে।যেটির কোন স্বাধীন অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায় নি।এঁর ইতিহাসটা কিন্তু বেশ পুরনো ।১৯৩২ সালে বেল ল্যাবরেটরিতে ডসেনিল নামে এক ছাত্রী ১.৩ সেকেন্ড পর পর একটি বেতার সংকেত পায়।পরে দেখা যায় এটি একটি পালসার।চীনারা ১০৫৪ সালে এটিকে কাকরা নিহারিকাতে ঐ একই  জায়গায় দেখে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিল।পালসার সম্পর্কে আরও কিছু মজার কথা বলার ছিল কিন্তু লিখাটি বেশি বড় হয়ে যাওয়ায় আজকে আর লিখতে পারলাম না।আমার এই লেখাটি সর্বপ্রথম বিজ্ঞান বাংলা ব্লগে প্রকাশিত।

You can leave a response, or trackback from your own site.