পারমানবিক বিদ্যুৎ - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

পারমানবিক বিদ্যুৎ

Print this post

আজকাল প্রায়ই শোনা যাচ্ছে বাংলাদেশে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে। অনেকেরই হয়তো বিষয়টি সম্পর্কে ধারনা নেই। এই লেখায় আমি চেষ্টা করব খুব সহজ কথায় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করতে। একটা বিষয় প্রথমেই পরিষ্কার করা ভাল, আমি এ বিষয়ের কোন বিশেষজ্ঞ নই।

অনেকেই হয়তো জানেন বড় বড় অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্রই চলে স্টীম টারবাইনে, যেখানে জ্বালানি পুড়িয়ে পানিকে বাস্পে পরিনত করা হয়। সেই বাস্প টারবাইনকে (টারবাইনের খুব সহজ বাংলায় পাখা বলতে পারেন)ঘুরায়। এই টারবাইনের সাথে জেনারেটর লাগানো থাকে। টারবাইন ঘুরলে জেনারাটর ঘুরে এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

তো পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ঠিক একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। শুধু বাস্প তৈরির জন্য যে প্রচুর পরিমান তাপ প্রয়োজন হয় তা আসে পারমানবিক বিক্রিয়া থেকে। যে ভেসেলে বা পাত্রে এই বিক্রিয়া ঘটানো হয় তাকে বলে রিয়াক্টর। আর এই বিক্রিয়ার জ্বালানি হল ইউরেনিয়াম। ইউরেনিয়াম আবার ২ প্রকার। ইউরেনিয়াম-২৩৫, ইউরেনিয়াম-২৩৮। জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয় ইউরেনিয়াম-২৩৫। কিন্তু সমস্যা হল প্রকৃতিতে যে ইউরেনিয়াম পাওয়া যায় তাতে মাত্র ০.৭২ শতাংশ থাকে ইউরেনিয়াম-২৩৫। বাকিটা ইউরেনিয়াম-২৩৮। অথচ পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে ধরনের ইউরেনিয়াম প্রয়োজন সেখানে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম-২৩৫ থাকতে হবে। এজন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক ইউরেনিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম-২৩৮ পরিমান কমিয়ে ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর পরিমান বৃদ্ধি করা হয়। একে বলে ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট। আপনারা জানলে খুব অবাক হবেন পারমানবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর পরিমান ৮০/৮৫ শতাংশে উন্নিত করতে হয়। মাত্র ০.৭২ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে খুব কঠিন কাজ।

একটা ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমানুকে ভাংলে ২টি ভিন্ন পদার্থ, ২টি বা ৩টি নিউট্রন এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। নতুন ২টি নিউট্রন আবার আরো ২টি ইউরেনিয়াম কে ভাঙ্গে। এভাবে এটা ক্রমাগত বাড়তেই থাকে এবং প্রচুর পরিমানে তাপ পাওয়া যায়। এটাকে চেইন রিয়াকশন বলে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত চেইন রিয়াকশন বিশাল পরিমানে তাপ উৎপন্ন করবে যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার সৃস্টি করবে। এজন্য চেইন রিয়াকশন কে সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন।

এই নিয়ন্ত্রনের মুলনীতি খুব সহজ। প্রতিটি ইউরেনিয়াম-২৩৫ পরমানু ভাঙ্গার সময় যে ২ অথবা ৩ টি নিউট্রন পাওয়া যায়, তারাই চেইন রিয়াকশন শুরু করে। সুতরাং যদি নিউট্রন গুলোকে কোন ভাবে সরিয়ে ফেলা যায় তাহলেই তো রিয়াকশনের গতি নিয়ন্ত্রন করা যাবে। এই নিউট্রন গুলোকে সরানোর জন্য বা অ্যাবজর্ব করার জন্য Boron বা Silver-indium-cadmium সংকরের রড ব্যবহার করা করা হয়। এসব রড মুক্ত নিউট্রন শোষন বা অ্যাবজর্ব করতে পারে। এই রডকে বলে কন্ট্রোল রড। প্রয়োজন অনুযায়ি কন্ট্রোল রড মুল রিয়াক্টর বা বিক্রিয়াস্থলে প্রবেশ করানো যায়। আবার বের করা যায়। যখন কন্ট্রোল রড বেশি পরিমানে ঢুকানো থাকবে তখন অধিকাংশ নিউট্রন অ্যাবজর্ব হয়ে যাবে। ফলে খুব কম পরিমান ইউরেনিয়াম-২৩৫ ভাংবে এবং কম তাপ উৎপন্ন হবে। আবার যখন কন্ট্রোল রড অল্প পরিমানে ঢুকানো থাকবে তখন কম পরিমান নিউট্রন অ্যাবজর্ব হবে, বাকিরা বিক্রিয়াতে অংশ নেবে। ফলে প্রচুর ইউরেনিয়াম-২৩৫ ভাংবে এবং বিশাল পরিমানের তাপ উৎপন্ন হবে। এভাবে প্রয়োজন অনুযায়ি কন্ট্রোল রড কে নিয়ন্ত্রন করে সঠিক পরিমানে তাপ উৎপাদন করা সম্ভব। আর প্রয়োজন অনুযায়ি সঠিক পরিমানে তাপ উৎপাদন করা গেলে, সাধারন স্টীম টারবাইনের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

আশা করছি আপনারা পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পেয়েছেন।

আপনি জানেন কি বাংলাদেশে একটি পারমানবিক রিয়াক্টর আছে? অনেকের কাছেই তথ্য টা বিস্ময়কর হতে পারে। কিন্তু সেই ১৯৮৬ সালে আনবিক শক্তি কমিশনের উদ্যোগে সাভারের গনকবাড়িতে(EPZ এর পাশে) একটি রিয়াক্টর স্থাপন করা হয়। যদিও এটা একটা রিচার্স রিয়াক্টর। এই রিয়াক্টরের নাম হল TRIGA – Mark II. এর ক্ষমতা হল ৩ মেগাওয়াট (থার্মাল পাওয়ার) । বৈদ্যুতিক ক্ষমতায় হিসাব করলে প্রায় ১মেগাওয়াট

You can leave a response, or trackback from your own site.