অভিনব মঙ্গলযাত্রা - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

অভিনব মঙ্গলযাত্রা

Print this post

মঙ্গল পৃথিবীর কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপজুড়ে নতুন করে মঙ্গল অভিযানের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। দীর্ঘকালীন সৌরজগৎ অভিযান এবং তাদের রহস্য উদঘাটন, সঙ্গে মঙ্গলে মানুষের অবতরণ লক্ষ্য পূরণে ইউরোপের ১৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’ বা ইসা (Europen Space Agency, ESA) ২০০১ সালে ঘোষণা করেছিল তাদের অরোরা প্রোগ্রাম। আলোচিত এই প্রকল্পটিতে ইংল্যান্ড তাদের অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। প্রকল্পটি সার্থক করে তুলতে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও ইচ্ছার কোনো কমতি ছিল না। তাদের আশা ২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গলে মানব অভিযান চালানো সম্ভব নয়। প্রকল্পটি ঘোষণার তিন বছর পর ২০০৪ সালের জুলাই মাসে অরোরা বোর্ড ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রাম (ESEP)-এর প্রস্তুতিকরণ পর্যায়ের অনুমোদন পেশ করা। এই প্রোগ্রামের অন্যতম একটি দিক হলো মঙ্গল অভিযান। যার মধ্যে রয়েছে ল্যান্ডার, অরটিবার এবং রোভারের সাহায্যে মঙ্গলের অনুসন্ধান। এরপর মঙ্গলে পাঠানো হয়েছে ৫টির মতো নমুনা ফেরতযান বা স্যাম্পল রিটার্নমিশন।

এরই মধ্যে ব্রিটিশ সরকার মঙ্গল অভিযান ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেট হিসাবে বরাদ্দ করেছেন ১০৮ মিলিয়ন ইউরো। ইসার কর্মসূচি অনুসারে অরোরা ফ্ল্যাগশিপ মিশনের অন্তর্ভুক্ত মঙ্গলের প্রথম রোভারযান পাড়ি দেয়ার কথা এ বছরের মধ্যেই। এই মঙ্গলযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এক্সোমার্স’ (EXO-MARS)। অভিযানটিতে থাকবে একটি অরবিটার ও একটি রোভার। রোভার থেকে প্রেরিত তথ্য অরবিটারের মাধ্যমে রিলে করে পৃথিবীতে পাঠানো হবে। ইংল্যান্ডের সাম্প্রতিক এ অভিযান গড়ে উঠবে অতীতের ‘বিগল-২’ অভিযানের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেই। রকেট, প্যারাসুট এয়ার ব্যাগের সাহায্যে অবতরণের পর যানটি নানা ধরনের যন্ত্রপাতি মঙ্গলের মাটিতে ছড়িয়ে দেবে। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মঙ্গলের ভূ-পৃষ্ঠের গভীর পর্যন্ত খনন বা ড্রিল করবে। নমুনার বিশ্লেষণ চলছে রোভারটির উন্নত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে। সন্ধান চালানো হবে বর্তমান ও অতীত প্রাণের অস্তিত্বের। ২০০ কেজি ওজনের এক্সোমার্স রোভার স্বয়ংক্রিয়তায় এর পূর্বের রোভারগুলোকেও ছাপিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস। তবে এ প্রকল্প যাতে ‘বিগল-২’-এর মতো মুখ থুবড়ে না পড়ে সে জন্য বিজ্ঞানীরা মহাকাশ সংক্রান্ত অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়েও জ্ঞানার্জন করতে মনোযোগী হয়েছেন।

মঙ্গলের মাটিতে বিজ্ঞানীরা ফিলোসিলিকেট নামে নতুন ধরনের খনিজের অস্তিত্বের কথা জানতে পেরেছেন, যা থেকে অতীতে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। আর এ খনিজের ভাঁজে মার্স ভ্যালিস ছাড়াও এক্সোমার্সের লক্ষ্য থাকছে অরবিয়াটেরা, টেরা মেরি ডিয়ানি, সিরটিস মেজর, নিলিফোসে নামে মঙ্গলের কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে অবতরণের।

ইসা তাদের চরম জটিল ও উচ্চাকাক্সক্ষী মঙ্গলের মাটি ও পাথরের নমুনা ফেরত অভিযানের পূর্বে এক্সোমার্স অভিযানটিকে মঙ্গলের শেষ অভিযান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অবশ্য পরিকল্পিত পাঁচটির মতো নমুনা ফেরত অভিযান চালানো হবে সম্ভবত আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং রাশিয়ার সহযোগিতায়। ইতোমধ্যে ব্রিটেন মঙ্গলের মাটি ও পাথরের নমুনা ফেরত অভিযানের জন্য একটি মহাকাশযানেরও নকশা তৈরি করে ফেলেছে। এটিকে দুটি পর্যায়ে বিভক্ত করে গড়ে তোলা হবে। একটি মহাকাশযানে থাকবে নমুনা ফেরত ক্যাপসুল যান, যাকে উৎক্ষেপণ করা হবে পূর্বে। এটির উৎক্ষেপণেরও দু’বছর পর অপর একটি মহাকাশযান বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে একটি অবতরণ ভেলা (Ascent Module) এবং মঙ্গল থেকে উৎক্ষেপণের জন্য একটি আরোহণযান (Ascent Vehicle) সুতরাং ইউরোপের মঙ্গল অভিযান সবদিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অভিনব হয়ে উঠতে চলেছে।

You can leave a response, or trackback from your own site.