পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। প্রায় ১০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই বনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশের সীমানায় এবং বাকিটা ভারতে। প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বন অনেকগুলো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীরও বাসস্থল। এছাড়া এই বনকে এক অর্থে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক ঢালও বলা চলে। কেননা বন্যা, ঝড়, আইলা, সিডর, জলোচ্ছাস ইত্যাদি বড় বড় দূর্যোগ থেকে এটি আমাদের বাচায়। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি সুইজারল্যাণ্ডভিত্তক নিউ সেভেন ওয়াণ্ডার্স ফাউণ্ডেশন আয়োজিত প্রাকৃতিক সপ্তার্শ্চয এর চুড়ান্ত তালিকায় সুন্দরবনকে নির্বাচিত করার জন্য তিনটি পদ্ধতিতে ভোট নেওয়া হচ্ছে।আমরা আমাদের এই বনকে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের প্রথম অবস্থানে দেখতে চাই।
সন্তান: সমুদ্রজল নোনা কিন্তু চোখের মতো শান্ত কেন নয়?’
মা: বাছা তোরা জানতি যদি আমার বুকেও সমুদ্রঝড় বয়!’
সন্তান: ‘তুফান যখন আসে তখন সমুদ্র কি দৈত্য হয় গো মা?
ঝরাপাতার মতোন ওড়ায় ঘরদোর আর ডোবায় যখন গাঁ!
ভাইয়া যখন ভেসে গেল ভেসে গেল যার যা কিছু ছিল,
আমি তোমায় ধরে ছিলাম, ভাইয়া কখন আঙুল ছেড়ে দিল!’
মা: ‘এক হাতে ঠিক ধরেছিলাম পুরোনো গাছ ভিটের পূর্বপারে,
গাছটা তখন ঠাঁই দিয়েছে, গাছটা কত সইতে দেখো পারে!’
সন্তান: ‘আমরা তোমায় ধরে ছিলাম, তুমি ছিলে গাছের কাণ্ড ধরে,
এইভাবে আর যায় কি বাঁচা, সমুদ্রজল ফুঁসছে যখন জোরে!
ভাইয়া ঠিকই পড়ল ঝরে!
মা গো আমার মা!
এ গাঁও ছেড়ে চল চলে যাই, এইখানে বল থাকবি কেমন করে!
কিন্তু গাছটা সঙ্গে নেব, ভাইয়ার বই, পুতুল গেছে ভেসে,
গাছটা তো ঠিক মায়ের মতো, ঠাঁই দিয়েছে, ওটাই নেব শেষে।
মা: ‘কী যে বলিস বাছা,
শেকড় উপড়ে ফেলা হলে গাছের পক্ষে সম্ভব কি বাঁচা?
গাছটা থাকুক গাছটা বাঁচুক বাঁচাক আমার গাঁ
সন্তান: ‘মা গো আমার মা!
চল চলে যাই দূরের দেশে, গাছটাকে কি সঙ্গে নেব না!’
অশ্রু ঝরে অশ্রু ঝরে অশ্রু কেবল ঝরে মায়ের চোখে
সমুদ্রজল বাড়ছে তাই তো, অশ্রুজলকে সাগর বলে লোকে!
সুন্দরবন শুধু এই বাচ্চাটাকে বাঁচিয়েছে, তা-ই নয়, সুন্দরবন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে চলেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে, আইলা ও সিডরের ক্ষয়ক্ষতি সুন্দরবন নিজের বুকে ধারণ করে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে। সুন্দরবন যেন আমাদের আরেক মা, পাখির মা যেমন ডানা মেলে বাচ্চাদের বাঁচায়, তেমনি সুন্দরবন বাঁচিয়ে রাখে আমাদের।
আর আমরা সেই সুন্দরবনকে একটা প্রতিযোগিতায় এত দূর পর্যন্ত এনে ভোট না দিয়ে হেরে যেতে দেব? কক্ষনো না। শুনতে পেলাম, মেয়েদের ভোট সুন্দরবনের পক্ষে কম পড়েছে। নারীরা বেশি করে নিজেদের ই-মেইল থেকে ভোট দিন। নারীর নামে নেওয়া সিম থেকে ভোট দিন। বারবার করে ভোট দিন সুন্দরবনকে।
হোক না ওই আয়োজক প্রতিষ্ঠানটা প্রশ্নসাপেক্ষ, সুন্দরবনকে নিয়ে তো আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশকে নিয়ে তো আমাদের ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই। আসুন, ভালোবাসি এবং ভোট দিই। ১১ নভেম্বর ২০১১ ভোট দেওয়ার শেষ দিন।
ভোট দেওয়া যাবে তিনভাবে
প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচনে সুন্দরবনকে তিনটি মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে। এক. ইন্টারনেটে এই www.new7wonders.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে গিয়ে Vote-এ ক্লিক করে ২৮টি স্থানের মধ্যে সাতটি স্থান পছন্দ করে ভোট দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে একটি ই-মেইল ঠিকানা থেকে একটি ভোট দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
দুই. টেলিফোন করে শুধু সুন্দরবনকে ভোট দেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে +১ ৮৬৯ ৭৬০ ৫৯৯০, +১ ৬৪৯ ৩৩৯ ৮০৮০, +৪৪ ৭৫৮ ৯০০ ১২৯০ এই তিনটি নম্বরের যেকোনো একটিতে কল করলে বার্তা শোনা যাবে। বার্তার পর একটি সংকেত দেওয়া হবে। এর পর ৭৭২৪ নম্বর চেপে সুন্দরবনের পক্ষে ভোট দেওয়া যাবে।
তিন. মুঠোফোনের খুদেবার্তার (এসএমএস) মাধ্যমেও ভোট দেওয়া যাবে। যেকোনো মুঠোফোনে SB লিখে পাঠাতে হবে ১৬৩৩৩ নম্বরে। প্রতি এসএমএসের জন্য দুই টাকা ৩০ পয়সা খরচ হবে। আর প্রতিটি এসএমএস ভোটই গণনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
পোষ্ট টি লিখেছেন ***বিশিষ্ট সাহিত্যক ও কলামিষ্ট আনিসুল হক।