দীপ্তিময় কোয়াসার - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

দীপ্তিময় কোয়াসার

Print this post

নতুন আবিস্কার মানেই পুরোনের পরিবর্তন । জ্যোতির্বিজ্ঞানে কোয়াসারের আবিস্কার তেমনি বিস্ময়ের জন্ম দেয় । এর আবিস্কার সত্যি-ই বিস্ময়কর কারণ এর আবিস্কারের কারণে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে পুরোনো সকল চিন্তা আর ধ্যান-ধারণায় এসেছে আমূল পরিবর্তন । কোয়েসার আবিস্কার জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ঠিক কি ধরনের সমস্যার মুখে ঠেলে দিয়েছিল তা বুঝতে হলে পদার্থবিদ্যার কিছু গোঁড়ার দিকের কথা না বললেই নয় ।

কোয়াসার

রাতের আকাশের দিকে তাকালে বিভিন্ন সময় আমরা যেসব কম-বেশি উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পাই, সাধারণত সেগুলো সবই হচ্ছে জ্যোতিষ্ক । আর এসব দৃশ্যমান জ্যোতিষ্করাও কিন্তু কোন এক শ্রেণির নয় । এসব জ্যোতিষ্কর মধ্যে আছে নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, নীহারিকা, গ্যালাক্সি ইত্যাদি । তবে রাতের আকাশে এসব উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মধ্যে আমাদের সৌরজগতের কিছু গ্রহ (যেমন, শুক্র) আর উপগ্রহ (চাঁদ) সহ সব জ্যোতিষ্কের আলোর উৎস হচ্ছে কোন না কোন নক্ষত্র । এসব নক্ষত্র কোটি কোটি বছর ধরে মহাশূন্যে প্রচণ্ড শক্তি বিকিরণ করে যাচ্ছে । কিন্তু নক্ষত্রদের এমন বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদনের রহস্য বার বার বিজ্ঞানীদের জর্জরিত করেছে । বিজ্ঞানীদের মনে একটাই প্রশ্ন ঠিক কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নক্ষত্র এই পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে ? আইনস্টাইনের  সমীকরণের সৌজন্যে আমারা সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই । আইনস্টাইনের এই সমীকরণ ব্যবহার করেই নক্ষত্রের শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করেন অ্যাটকিনসন (Atkinson), বেটে (Bethe) । তাদের দেয়া ব্যাখ্যা থেকেই আমরা জানতে পারি, নক্ষত্রদের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন প্রতিনয়ত নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় হিলিয়াম সহ অন্য মৌলে রুপান্তরিত হছে । আর এক্ষেত্রে ৪টি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হচ্ছে । ভরের সূক্ষ্ম হিসেবে এক্ষেত্রে বস্তু কণা ( যার পরিমাণ ৪*১.০০৭৬ – ৪.০০৩ = ০.০২৭৪) অব্যবহৃত থেকে যায় । আর সেই বস্তুকণাটুকুই বিলুপ্ত হয়ে জন্ম নেয় শক্তি । এক্ষেত্রে ৪টি হাইড্রোজেন পরমাণুর ভরের ০.৭ শতাংশ, অর্থাৎ ১০০০ ভাগের ৭ ভাগ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে । আর এভাবেই নক্ষত্রদের দূরত্ব, বয়স, জ্বালানীর পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষণ করে নক্ষত্রদের ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা যেসব ভবিষৎবাণী করেছিলেন তার সবই ছিল সফল আর সন্তোষজনক । কিন্তু কোয়েসার এর আবিস্কার আবার বিজ্ঞানীদের চিন্তাসমুদ্রে নিক্ষেপ করে । কারণ আমাদের আকাশগঙ্গার চেয়ে শত শত গুন বেশি শক্তি বিকিরণ করে এক একটি কোয়েসার । যেখানে আমাদের এই আকাশগঙ্গার বিকিরণ ক্ষমতা প্রায় ১০০ কোটি সূর্যের সমান । অন্যদিকে কোয়েসারের ব্যাস মাত্র কয়েক আলোকদিন । আর যেখানে সাধারণ গ্যালাক্সির ব্যাস লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ, সেখানে কোয়েসারের মত এমন ছোট বস্তু কি করে এত বেশি পরিমাণে শক্তি উদগীরণ করে ?

বিজ্ঞানীদের এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া খুবই বিলম্বিত হত যদিনা তারা রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা শুরু করতেন । আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালে বিজ্ঞানীদের প্রথম এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় যখন তরুণ জ্যোতির্বিদ সিরিল শক্তিশালী বেতার তরঙ্গের উৎস লক্ষ্য করেন । তাৎক্ষনিকভাবে ওই উৎসের অবস্থান নির্ণয় না করা গেলেও তিনি লক্ষ্য করেন কন্যামণ্ডল অতিক্রম করার সময় চাঁদ এ উৎসকে ঢেকে দেবে । তাই রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে চাঁদের সৃষ্ট বাঁধার কারণে সংকেত না পাওয়া আর চাঁদ সরে গেল আবার সংকেত পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের পার্থক্য থেকে বেতার তরঙ্গের উৎসের অবস্থান নির্ণয় করা গেলো । ১৯৬৩ সালে ক্যালটেকের মার্টিন শ্মীড 3C 273 নামের এই অজানা বস্তুটির বর্ণালি পরীক্ষা করে জানান এই মূলত হাইড্রোজেনের বর্ণালি এবং বর্ণালিতে মহাবিশ্বের প্রসারণঘটিত রক্তিমসরণ ঘটেছে । এর ১৬ শতাংশ রক্তিমসরণ থেকে জানা গেলো এর দূরত্ব প্রায় ২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ । এভাবেই আবিষ্কৃত হল কোয়াসি স্টেলার রেডিও সোর্স – কোয়াসার ।

এর পর প্রায় ১৫০০ এর মত কোয়াসার আবিষ্কৃত হয়েছে । এদের মধধ্যে কতগুলোর রক্তিমসরণ ৫০০ শতাংশের বেশি ।  তবে প্রতি মিলিয়ন গ্যালাক্সির বিপরীতে কোয়াসার পাওয়া যায় মাত্র একটি । আর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কোয়াসার পাওয়া গেছে এক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। এর মানে এই নয় যে এরা মহাবিশ্বে অতি দুর্লভ। আসলে এদের জীবনকালই এদের দুষ্প্রাপ্যতার কারণ । তবে অতিত মহাবিশ্বে কোয়াসারের সংখ্যা আরও বেশি ছিল । কিন্তু গালক্সির গঠনের সাথে কোয়াসারের সম্পর্ক, এদের শক্তি বিকিরণের বিপুল মাত্রা, এদের ক্ষুদ্রাকৃতি আর জীবনকাল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা খুব একটা স্বচ্ছ নয় । তবে কোয়াসার দীর্ঘজীবী নয় বলেই মনে করা হয় ।

তথ্য সুত্রঃ

. “নক্ষত্রের গান” – বিমান নাথ ( আনন্দ পাবলিশার্স ,২০০৬)

. “জ্যোতিঃর্পদার্থবিজ্ঞান পরিচিতি” – ফারসীম মান্নান মোহাম্মাদী ( বাংলা একাডেমী, ২০০০)

. “Physical Universe – An introduction to astronomy” – Frank Shu (University Science Books

পোষ্ট টি লিখেছেন….“চতুর্থ মাত্রা”

You can leave a response, or trackback from your own site.