৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে মিসরের খলিফা ছিলেন মা আদ আল-মুইজ। সেদিনের অন্যান্য শিক্ষিত মানুষের মতো তিনিও পাখির পালক কিংবা কাঠের কাঠিতে কালি লাগিয়ে লেখালেখির কাজ করতেন। কিন্তু এভাবে লিখতে গেলে প্রায়ই কালি লেগে তার হাত এবং কাপড় নষ্ট হয়ে যেত। তাই তিনি এমন একটি কলম তৈরি করতে বললেন, যা দিয়ে লিখতে গেলে হাত বা কাপড় নষ্ট হবে না। শুরু হয়ে গেল কলম তৈরির কাজ এবং খলিফার তত্ত্বাবধানেই কালির আধারযুক্ত কলম তৈরি করা হলো। এই হচ্ছে কলম তৈরির প্রাথমিক ইতিহাস। তবে দশম শতাব্দীর আগে মানুষ পাখির পালক আর কালি দিয়েই মূলত লেখালেখি করত। মধ্যযুগ এবং তার পরবর্তী সময়ে কালির আধারযুক্ত সে কলম উন্নত করার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আধুনিক ঝরনা কলমের জনক লুইস ওয়াটারম্যান। তিনি ছিলেন এক বীমা কোম্পানির দালাল। ১৮৮৩ সালে লুইস তার এক মক্কেলের সঙ্গে নতুন এক বীমাচুক্তি পাকাপাকি করে ফেললেন। পরিতৃপ্তির হাসি নিয়ে তিনি মক্কেলকে একটি কলম দিলেন স্বাক্ষর করার জন্য। কিন্তু কলম দিয়ে কালি বের হয় না। একটু ভালো করে চেষ্টা করতেই বের হলো এক ছোপ কালি। আর তাতে মাখামাখি হয়ে গেল পুরো চুক্তিপত্র। হতভম্ব লুইস মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলেন। সোজা ছুটে গেলেন নিজের অফিসে। নতুন একটা চুক্তিপত্র নিয়ে এলেন। কিন্তু ততক্ষণে অন্য এক দালাল দখল করে ফেলেছেন তার মক্কেলকে। চোখের সামনে এতবড় এক সুযোগ হাতছাড়া হতে দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারলেন না লুইস। বাদ দিয়ে দিলেন সব রকম দালালি, হতচ্ছড়া সেই ফাউনটেন পেন ফেলে দিয়ে চলে গেলেন তার ভাইয়ের ওয়ার্কশপে। তিনি জেদ ধরলেন, নতুন এক ঝরনা কলম তৈরি করতে হবে, যা কখনো এমন ভোগান্তি দেবে না। অভিকর্ষ বল আর কৈশিক নালিকা নীতি ব্যবহার করে লুইস ওয়াটারম্যান আবিষ্কার করলেন আধুনিক এক ফাউনটেন পেন, যার কালি নিঃসৃত হতো বাতাসের সাহায্যে আর কালির প্রবাহ ছিল স্বাভাবিক এবং মসৃণ। তিনি নতুন সেই কলমের নামকরণ করলেন ‘দ্য রেগুলার’। ১৮৮৪ সালে তিনি সরকারি সনদ পেলেন। পনের বছর পর মন্ট্রিলে প্রতিষ্ঠা করলেন ফাউনটেন পেন তৈরির এক কারখানা। তার মৃত্যুর পর ভাইপো ফ্রাঙ্ক ডি ওয়াটারম্যান ব্যবসাকে ছড়িয়ে দিলেন সারা বিশ্বে।
ফাউনটেন পেন কাহিনী
বিজ্ঞান প্রযুক্তি » আলোকবর্ষ » 28th November, 2011 » মন্তব্য করা হয়নি » »
536 বার দেখা হয়েছে
Print this post