উড়োজাহাজ এলো যেভাবে... - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

উড়োজাহাজ এলো যেভাবে…

Print this post

যে প্রযুক্তি ঘুচিয়েছে দূরত্ব এমনকি এর বদৌলতে প্রবাসে আপনজন অল্প সময়ের ব্যবধানে কাছে চলে আসতে পারে। এর আধুনিক নাম অ্যারোপ্লেন বা বিমান। কিভাবে এই উড়োজাহাজ আবিষ্কৃত হলো। আমেরিকান অরভিল রাইট এবং উইলবার রাইট ভ্রাতৃদ্বয়কে উড়োজাহাজের আবিষ্কারক হিসেবে গণ্য করা হয়। শৈশবকালের পড়াশোনা শেষ করে দুই ভাই হাতে-কলমে কাজ করার জন্য ছোট কারখানা তৈরি করলেন। প্রথমে তারা কিছুদিন বাজারে প্রচলিত ছাপার যন্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করলেন, যাতে তার ব্যবহার আর সহজ, সরল ও উন্নত হয়। এরপর বাইসাইকেলের উন্নতির জন্য সচেষ্ট হলেন। দুটি ক্ষেত্রেই তারা অনেকাংশে সফল হয়েছিলেন এবং তাদের প্রবর্তিত আধুনিক যন্ত্র ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে যে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের জন্য দুই ভাইয়ের খ্যাতি, প্রকৃতপক্ষে তার চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৮৯৬ সাল থেকে। একজন র্জামান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েনথাল কয়েক বছর যাবৎ উড়ন্ত যান নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তার তৈরি যান আকাশে উড়লেও তাতে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতো। ১৮৯৬ সালে লিলিয়েনথালের আকস্মিক মৃত্যুতে গবেষণার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে লিলিয়েনথালের তৈরি উড়ন্ত যানের নকশা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় দেখলেন একদিকে যেমন তা অসম্পূর্ণ এবং ভুলত্রুটিতে ভরা। প্রতিটি নকশার বিবরণ পুক্সখানুপুক্সখভাবে বিশ্লেষণ করে তারা বুঝতে পারলেন শুধু বাতাসের গতিবেগে একে বেশিদূর চালনা করা যাবে না, প্রয়োজন শক্তিচালিত ইঞ্জিনের যা একমাত্র পারবে উড়ন্ত যানকে গতি দিতে কিন্তু কেমন হবে সেই ইঞ্জিন, তার প্রকৃতি কিছুতেই নির্ধারণ করতে পারেন না দুই ভাই। চলছে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রতিবারেই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। এক এক সময় হতাশায় ভেঙে পড়েন দুজনে। আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যে কোনো মূল্যেই হোক সাফল্য তাদের অর্জন করতেই হবে একদিন কিন্তু কিছুদিন পর তারা বুঝতে পারলেন এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্যে প্রয়োজন আরও জ্ঞান অর্জন ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। আর পরিপূর্ণ জ্ঞান না হলে সম্পূর্ণ সাফল্য অর্জন অসম্ভব। শুরু হলো ব্যাপক অধ্যয়ন আর অধ্যবসায়। দুই ভাইয়ের মনের মধ্যে জেগে উঠেছিল স্বপ্ন_ এমন যন্ত্র তৈরি করতে হবে যাতে মানুষ শূন্য আকাশে ভেসে যাবে। আর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দুই ভাই ছোট একটি কারখানা তৈরি করলেন। দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় তৈরি হলো এক বিশাল গ্লাইডার বা উড়ন্ত যান। এতদিন যে ধরনের গ্লাইডার তৈরি হতো এটি তার চেয়ে একেবারে স্বতন্ত্র। এই গ্লাইডার বাতাসে ভারসাম্য রেখে সহজেই উড়তে সক্ষম হবে। গ্লাইডারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দুই ভাই তৈরি করলেন দুই পাখাবিশিষ্ট ছোট বিমান। এ বিমানের সামনে ও পেছনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি ছোট যন্ত্র সংযোজন করা হলো। এর নাম এলিভেটর। মূলত এই এলিভেটরের সাহায্যে পাইলট কোনো বিমানকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে। দুই ভাই আবার শুরু করলেন তাদের কর্মতৎপরতা। এবার তাদের মূল লক্ষ্য কিভাবে গ্লাইডারকে শক্তিচালিত করা যায়। বিভিন্ন ইঞ্জিন দিয়ে পরীক্ষা করার পর দেখা গেল একমাত্র পেট্রোলচালিত ছোট ইঞ্জিনই বিমান চালানোর ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। প্রতি তিন পাউন্ড ওজনের জন্য এক অশ্বশক্তিসম্পন্ন ইঞ্জিন প্রয়োজন। এজন্যে অরভিল এবং উইলবার রাইট ইঞ্জিন তৈরির কাজে হাত দিলেন। কয়েক মাসের চেষ্টায় তৈরি হলো বিমানে ব্যবহারের উপযুক্ত ইঞ্জিন। প্রত্যাশিত সেই দিনটি এলো, ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৩ সাল। তারপর সব শক্তি দিয়ে উড়ন্ত যানকে ঠেলতে শুরু করলেন। অবাক হয়ে গেল তাদের ঘিরে থাকা লোকজন। তাদের অবাক দৃষ্টির সামনে দিয়েই সামান্য দূর গিয়েই বাতাসের বুক চিরে শূন্যে উড়ে চলল প্রথম বিমান। কিছুদূর গিয়ে একবার পাক খেল। তারপর ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে এলো। প্রায় ১২ সেকেন্ড আকাশে ভেসেছিল রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের প্রথম অ্যারোপ্লেন। এই বিমান যাত্রাই নতুন যুগের সূচনা করল।

You can leave a response, or trackback from your own site.