মহাকাশ অভিযানের দীর্ঘতম সফল পরীক্ষা ‘মঙ্গল ৫০০ - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

মহাকাশ অভিযানের দীর্ঘতম সফল পরীক্ষা ‘মঙ্গল ৫০০

Print this post

অদেখাকে দেখার এবং অজানাকে জানার সাধ মানুষের চিরায়ত স্বভাব৷ চাঁদের বুকে পদচিহ্ন এঁকে দেওয়ার পর এখন চেষ্টা চলছে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের৷ তারই একটি পর্যায় হিসেবে অনুরূপ অভিযান ‘মঙ্গল ৫০০’ নামের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে রাশিয়া৷

২০১০ সালের তেসরা জুন রাশিয়ার ইন্সটিটিউট ফর বায়োমেডিকেল প্রোবলেমস – আইবিএমপি শুরু করে মোট ৫২০ দিনের এই পরীক্ষা৷ এই পরীক্ষামূলক অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘মার্স ৫০০’ বা ‘মঙ্গল ৫০০’৷ রাশিয়ার তিন জন এবং ইটালি, ফ্রান্স ও চীনের একজন করে বিজ্ঞানী অংশ নিয়েছিলেন এই নমুনা মহাকাশ অভিযানে৷ মস্কোয় মহাকাশযানের আদলে নির্মিত ১৮০ বর্গমিটারের আধারের মধ্যে প্রায় ১৮ মাস কাটাতে হয়েছে ছয় জন বিজ্ঞানীকে৷ এসময় তাঁরা পৃথিবীতেই ছিলেন কিন্তু তাঁদেরকে এমনভাবে দৈনন্দিন কাজ করতে হতো যেন তাঁরা মঙ্গল গ্রহের পথে উড়ে গেছেন এবং সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসছেন৷

 

Space on mars

Space on mars

এসময় ৩০টিরও বেশি ক্যামেরা দিয়ে তাঁদের কর্মকাণ্ড ও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু সময়ের জন্য মহাকাশযান থেকে কৃত্রিম মঙ্গল গ্রহে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন ইটালির ডিয়েগো উরবিনা, রাশিয়ার আলেক্সান্ডার স্মলেভস্কি এবং চীনের ওয়াং ইয়ু৷ এসময় মূল নভোযানে সহকর্মীদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন রাশিয়ার অ্যালেক্সেই সিটেভ ও সুখরব কমোলভ এবং ফরাসি নভোচারী রোমাঁ শার্ল৷

রেড প্ল্যানেট নামে পরিচিত মঙ্গল গ্রহে ৫২০ দিনের পরীক্ষামূলক অভিযান শেষে ৪ নভেম্বর শুক্রবার সুস্থ ও সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরেছেন ছয় বিজ্ঞানী৷ তবে এই দীর্ঘ সময় পৃথিবীর পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় এই অভিযান থেকে বের হওয়ার পর প্রায় তিন দিন তাঁদেরকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল৷ এসময় তাঁদের দেহের বিভিন্ন অংশে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়৷ এরপর ৭ নভেম্বর থেকে তাঁদের চলাফেরা কিছুটা স্বাধীনভাবে শুরু হয়েছে৷ তবুও আগামী এক মাস তাঁদেরকে মস্কোয় আরো পরীক্ষার আওতায় থাকতে হবে৷

এই পরীক্ষামূলক নভোযানের ভেতর একঘেয়েমি এবং একাকিত্ব বোধ করেছেন সম্ভাব্য এই নভোচারীরা৷ রোমাঁ চার্লস স্বীকার করেছেন যে, ৫২০ দিনের পরীক্ষায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল একঘেয়েমি৷ তবে সেই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে শার্ল এবং উরবিনা গিটারে সুর তুলেছেন মাঝে মাঝে৷ গেয়েছেন ‘হোম সুইট হোম’ কিংবা ‘রকেট ম্যান’সহ প্রিয় গানগুলো৷ দীর্ঘদিন ধরে প্রায় একই ধরণের খাবার নিয়েও বেশ কষ্টে ছিলেন তাঁরা৷ চার্লস জানালেন, একজন ফরাসি হিসেবে তিনি মচমচে ক্রঁস, পনির এবং রেড ওয়াইনের অভাব বোধ করেছেন খুব বেশি৷ আসলে খাওয়ার মধ্যে কোন মজাই ছিল না৷ বরং শুধু বাঁচার তাগিদে খেতে হতো বলে মন্তব্য করলেন চীনা চিকিৎসক ওয়াং ইয়ু৷ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট’এর সহকারী অধ্যাপক ড. ফারসিম মান্নান মোহাম্মেদী এই অভিযানের কিছু বিশেষ দিক তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘‘একটি ছোট নভোযানের মধ্যে দীর্ঘদিন নভোচারীরা থাকলে কী ধরণের স্বাস্থ্যগত ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার মুখোমুখি হবে তা এটির মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এছাড়া নভোযানে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে সেসব যন্ত্রপাতির সাথে পরিচিতিকরণ, সেগুলো চালনা ও নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানীদের দক্ষতা বাড়ানোর কাজ করা হয়েছে এই অভিযানের মধ্য দিয়ে৷ এই নমুনা অভিযানে প্রয়োজনীয় প্রায় সকল সুযোগ সুবিধা, যান্ত্রিক ও কারিগরি কর্মকাণ্ড সংযোজন করা হয়েছিল৷ তবে বাস্তবে মঙ্গল অভিযানের সময় পাঁচ কোটি কিলোমিটার ফ্লাইটের জন্য যে অভিকর্ষ ত্বরণ এবং তার ফলে ওজনশূন্যতা অনুভব হবে তা এই অভিযানে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি৷ এছাড়া বাস্তব অভিযানে যে কসমিক রে বা মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাব থাকবে সেটিও ‘মঙ্গল ৫০০’ অভিযানে ছিল না৷” তবুও এটিই সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মহাকাশ অভিযানের পরীক্ষা বলে উল্লেখ করে আইবিএমপি৷

এই পরীক্ষামূলক মঙ্গল অভিযানের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ড. ফারসিম বলেন, ‘‘নিকট ভবিষ্যতে না হলেও দূর ভবিষ্যতে মনুষ্যবাহী নভোযান যে মঙ্গল গ্রহ পানে যাবে তার পর্যায়ক্রমিক একটি ধাপ বলা যেতে পারে এটিকে৷ আমরা আশাবাদের সাথে বলতে পারি যে, আমাদের অনেকেই যারা এখন বেঁচে আছেন তারা হয়তে দেখতেই পাবেন যে মানুষ মঙ্গল গ্রহে হেঁটে বেড়াচ্ছে৷ সবমিলিয়ে বলা যায়, এসব গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের নভোচারীদেরকে মানসিকভাবে, স্বাস্থ্যের দিক থেকে এবং অবশ্যই প্রযুক্তির দিক থেকে তৈরি করা, যাতে করে মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানো একটি যৌক্তিক সম্ভাবনা হয়ে যায় অদূর ভবিষ্যতে৷”

 

post by …..সমসময়

You can leave a response, or trackback from your own site.