শিলাবৃষ্টির কারণ - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

শিলাবৃষ্টির কারণ

Print this post

শিলাবৃষ্টি প্রকৃতির এক স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। শিলাবৃষ্টির নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। আমাদের দেশে সাধারণত শিলাবৃষ্টি বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকে বেশি হয়। তবে গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালেই সচরাচর শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টির ফলে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়। আম, লিচু, ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন বিভিন্ন স্থানে ধান পাকা শুরু হয়েছে জমিভর্তি তরমুজ আর টমেটো। এখন যদি শিলাবৃষ্টি হয় তাহলে কৃষকের মাথায় হাত ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। প্রশ্ন জাগে, এই শিলাবৃষ্টি হয় কেন?

গ্রীষ্মকালে প্রখর সূর্যকিরণে ভূপৃষ্ঠ যখন উত্তপ্ত হয়, তখন ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুরাশি আয়তনে বেড়ে হালকা হয়ে যায়। হালকা হওয়ার ফলে ওই বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়। যদি সমুদ্র বায়ুর প্রভাবে বা অন্য কোনো কারণে ওই বায়ুস্তরে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকে তবে ওই বায়ুপ্রবাহ উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে। যদি ভূপৃষ্ঠে উত্তাপজনিত তাপমাত্রা বেশি হয়, তাহলে বায়ুস্তর আয়তনে বেশি বেড়ে আরও হালকা হয়ে পড়ে। আর তখন তা দ্রুতবেগে উপরে উঠতেই থাকে।

বায়ুস্তর উপরে উঠে ক্রমশ ঠাণ্ডা হয়। তখন এর মধ্যে যে জলীয়বাষ্প ধরা আছে, সেটা মেঘে পরিণত হয়। এভাবে প্রথমে মেঘ, পরে বিশাল পুঞ্জ-মেঘ আর শেষ পর্যন্ত বজ্র মেঘ সৃষ্টি হয়। বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প যত বেশি থাকবে, বজ মেঘ পরিমাণে তত বেশি তৈরি হবে। আর বজ্র বৃষ্টির সম্ভাবনাও তত বাড়বে। বজ্র মেঘ সাধারণত ১৫০০ বা ২০০০ মিটার থেকে শুরু হয়ে ৯০০০ থেকে ১০০০০ মিটার পর্যন্ত মাথা তোলে। অবশ্য ১৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বজ্র মেঘের সংখ্যাও কম নয়। বজ্র মেঘ যখন সৃষ্টি হয়, তখন এই মেঘের ভেতর ঊর্ধ্বগামী বায়ুস্রোতের প্রাধান্য দেখা যায়। যখন বজ্র মেঘের গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়, তখন মেঘের এক পাশ থেকে বায়ুস্রোত এই মেঘের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে এবং মেঘের ভেতর একপাশে ঊর্ধ্বগামী ও অপর পাশে নিম্নগামী বায়ুস্রোত সৃষ্টি হয়। তাহলে মেঘের একদিক দিয়ে হাওয়া উঠছে, অপরদিক দিয়ে হাওয়াটা ঘুরে এসে নামছে। এভাবে ক্রমাগত ওঠানামার ফলে মেঘের ভেতর যে বিশাল হিমকণাগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলো বায়ু তাড়িত হয়ে বারবার মেঘের ভেতর ওঠানামা করে আয়তনে আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত এগুলো এত ভারি হয়ে যায় যে, ঊর্ধ্বগামী বায়ুপ্রবাহ এদের আর ধরে রাখতে পারে না। তখনই এগুলো শিলাবৃষ্টির আকারে ঝরে পড়ে। মেঘের যে অঞ্চলে নিম্নগামী বায়ুপ্রবাহ বর্তমান, সেদিকে বৃষ্টিধারাও অন্যদিকের চেয়ে বেশি। যদি এই বজ্র বৃষ্টি ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে হয়, তখন বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকে তাপমাত্রা খুব একটা বাড়েনি বলে মেঘ থেকে বিচ্যুত হয়ে এই শিলাখণ্ডগুলো শিলার আকারেই মাটিতে এসে পড়ে। তখন শিলাবৃষ্টি পাওয়া যায়। কিন্তু এপ্রিল বা তারপরও মেঘের মধ্যে প্রচুর শিলাখণ্ড বর্তমান থাকলেও সেগুলো উত্তপ্ত বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে ভূতলে পড়ার সময় গলে পানি হয়ে যায়। তখন শিলাবৃষ্টি হয় না, শুধুই বজ্র বৃষ্টি হয়ে থাকে। শিলাবৃষ্টির সময় শিলাখণ্ডগুলো সরাসরি নেমে আসে না। তা উপরে-নিচে বারবার ওঠানামা করে। একটা শিলাখণ্ডকে যদি এর ব্যাস বরাবর চিরে দুই টুকরো করা যায়, তবে এর ভেতরে কতগুলো সমকেন্দ্রিক চক্র নজরে আসে। এই চক্রগুলো পরপর দেখলে বোঝা যায়, একটি চক্র স্বচ্ছ বরফ আর পরেরটি অস্বচ্ছ বরফ দিয়ে তৈরি। মেঘ-বৃষ্টির পর যখন বিশাল হিমকণাটি মেঘের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে নিচে পড়ে, তখন অস্বচ্ছ বরফের আস্তরণ তৈরি হয়। আবার ঊর্ধ্বগামী বায়ুস্রোতে তাড়িত হয়ে যখন ওই শিলাখণ্ড অতি প্রচণ্ড গতিতে বহু ঊধর্ে্ব চলে যায়, তখন এর গায়ে স্বচ্ছ বরফের আবরণ তৈরি হয়। এভাবে ক্রমশ এর আয়তন ও ওজন বাড়ে, আর শেষ পর্যন্ত এটা মাটিতে এসে আছড়ে পড়ে। আর এটাই শিলাবৃষ্টির মূল রহস্য।

You can leave a response, or trackback from your own site.