দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী - প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light | প্রযুক্তির আলোয় * আলোকিত জগৎ | The whole technology of light

দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী

Print this post

যাকিং বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়েই একটা পরিচিত শব্দ। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় যে, হ্যাকাররা সুরক্ষিত সব কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আর কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করে কোন আর্থিক লাভের জন্য নয়, স্রেফ “দেখিয়ে দিলাম, আমরাও পারি” এই ধরনের উপলব্ধি থেকে।এরা সাধারণত খুব অহংকারী, দুর্বিনীত, এবং মেধাবী হয়। তো…. আসুন সে রকম কয়েকজন হ্যাকারের সাথে আজ আমরা পরিচিত হই…….

জন ড্রেপার

Jhon Draper

হ্যাকার নামটা সর্বপ্রথম প্রদান করা হয়েছিল এরকম হাতেগোনা মানুষের মধ্যে জন ড্রেপার অন্যতম। তাকে বলা হয় হ্যাকিংএর আদি পিতা। ১৯৭০ দশকে আমেরিকাতে ক্যাপ’ন ফ্রেঞ্চ নামে একটা খাবার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। একবার ক্যাপ’ন ফ্রেঞ্চের নির্মাতারা তাদের পন্যের প্রচার কৌশল হিসেবে এর প্যাকেটের ভিতরে একটি খেলনা হুইসেল দেয়া শুরু করে। আর ড্রেপার এই হুইসেল দিয়েই তার কার্য সিদ্ধি করে। ড্রেপার খেয়াল করেছিল যে, একটি সক্রিয় টেলিফোন কল শেষ হলে টেলিফোন এক্সেঞ্জ থেকে যে স্বয়ংক্রিয় শব্দটি প্রদান করা হয় তার সাথে এই হুইসেলের হুবহু মিল আছে। সে কল করার পর নির্দিষ্ট একটি সময়ে ওই হুইসাল দিয়ে শব্দ করতো যা থেকে এক্সেঞ্জ মনে করতো কলটি বোধয় শেষ হয়েছে। কিন্তু যেহেতু কলটি ছিল ড্রেপারের বানানো তাই বাস্তবে কলটি শেষ হত না। তাই হুইসেল বাঁজাবার পরে ড্রেপার ইচ্ছে মত কথা বলতে পারতো এবং এর জন্য তাকে বাড়তি কোন বিল দিতে হত না। কিন্তু বিধি বাম….. বছর দুই এভাবে চলার পর অবশেষে ধরা পড়ে ড্রেপার আর, সাজা হিসেবে তাকে দুই মাস জেলে কাটাতে হয়।

কেভিন মিটনিক

kevin mitnick দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী | Techtunes

হ্যাকিং এর জগতে অন্যতম বিখ্যাত হ্যাকার হচ্ছে কেভিন মিটনিক। ১৯৮১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে হ্যাকিং এর ভূবনে পদার্পন করে মিটনিক। প্রথমে টুকটাক হ্যাকিং করলেও সিরিয়াসলি হ্যাকিং শুরু করে ১৯৮৩ সালের দিকে। সে সময়ে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালোলিনার ছাত্র ছিল সে। একদিন ইন্টারনেটে পূর্বসুরি আরপানেটে অ্যাকসেস পেয়ে যায় মিটনিক আর আরপানেট যেহেতু মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি নেটওয়ার্ক ছিল সেহেতু মন্ত্রনালয়ের সকল স্পর্শকাতর সকল ফাইল দেখার সুযোগ পেয়ে যায় কেভিন মিটনিক। তবে সে কখনো এই ফাইল গুলোর অপব্যাবহার করে নি। পেন্টাগনের গোপন ফাইলে ঘুরে বেড়ানো ছিল তার শখের মতোই। কিন্তু এভাবে আর বেশিদিন চলে নি, আরপানেট-এর সিস্টেম এ্যাডমিন-রা টের পেয়ে যায় মিটনিকের অস্তিত্ব। অবৈধ ভাবে কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় তাকে এবং পাঠানো হয় সংশোধন কেন্দ্রে। কিন্তু মিটনিক পুরোপুরি সংশোধিত হয় নি। হ্যাকিং তার কাছে ছিল নেশার মত, আর এ কারণেই পরবর্তিতে তাকে বেশ কয়েকবার লাল দালানের ভাত খেতে হয়েছে।

রবার্ট মরিস

morris2004 দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী | Techtunes

হয়তো দুনিয়া জোড়া বিখ্যাত হবার চিন্তা করেই হ্যাকিং শুরু করেছিল মরিস। ১৯৮৮ সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র থাকা অবস্থায় ৯৯ লাইনের একটা কোড লিখে ছেড়ে দিয়েছিল বিভিন্ন নেটওয়ার্কে। যা খুব দ্রুত শত শত কম্পিউটারকে আক্রমন করে। পরবর্তিতে এই কোড মরিস ওয়ার্ম নামে পরিচিতি লাভ করে। ধরা পরার পর মরিস আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলে, সে কোন খারাপ কাজ করে নি। কোড ছাড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেটের সাথে কতগুলো কম্পিউটার সংযুক্ত আছে তা বের করা। শত শত কম্পিউটারকে আক্রমন করার অপরাধে ১৯৮৯ সালে গ্রেফতার হয় মরিস। পরে অবশ্য ১০ হাজার ডলার জরিমানা দিয়ে মুক্ত হয় সে।

কেভিন পোলসেন

kevin poulsen দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী | Techtunes

১৯৮৯ সালে কেভিন পোলসেন মানের ২৪ বছর বয়সী এক যুবককে ফ্রেফতার করে এফবিআই। কম্পিউটার ও টেলিফোন সার্ভারে গোপনে প্রবেশের দায়ে গ্রেফতার করা হয় তাকে। কিন্তু গ্রেফতার করে বেশীদিন আটকে রাখা যায়নি তাকে। বিচার শুরুর আগেই কৌশলে জেল থেকে পালিয়ে যায় সে। এর মধ্যে সে একটি ঘটনা ঘটায় লস এঞ্জেলেসে। সেখানকার একটি রেডিও স্টেশন একবার ঘোষণা দেয়, একটি নির্দিষ্ট দিনে তাদের কাছে যত কল আসবে তার মধে ১০৩ নম্বর কলারকে দেয়া হবে একটি দামী পোর্শে গাড়ি। পোলসনও তার কাজের ধারা অনুযায়ী রেডিও স্টেশনের টেলিফোন সুইস বোর্ড লাইন হ্যাক করে বনে যান ১০৩ নম্বর কলার। তারপর দাবি করে পোর্শে গাড়িটি। কিন্তু এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয় নি। দ্রুতই সব ফাঁস হয়ে যায়। অবশেষে পালিয়ে যাবার ১৭ মাসের মাথায় পুনরায় গ্রেফতার হয় পোলসন।

ভ্লাদিমির লেভিন

Vladimir Levin

কুখ্যাত হ্যাকার ভ্লাদিমির লেভিনের মূল টার্গেট ছিল বিখ্যাত সিটি ব্যাংক। কয়েকটি কর্পোরেট ইউজারের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে তাদের একাউন্ট থেকে সে সরিয়ে ফেলে ১০.৭ মিলিয়ন ডলার। এসব টাকা সরিয়ে ফেলে সেগুলো পাঠিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইসরায়েল ও জার্মানির কয়েকটি ব্যাংক একাউন্টে। এ কাজ অবশ্য লেভিন একা করে নি, তার সহযোগী ছিলো আরো চার-পাঁচজন। তার সঙ্গী সাথীদের কয়েকজন বিভিন্ন দেশের ওই গোপন একাউন্টগুলো থেকে টাকা তুলতে গিয়ে ধরা পড়ে। লেভিন নিজেও ধরা পড়ে ১৯৯৫ সালে। বিচারে তার ৩ বচরের জেল ও ২.৫ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। আর খোয়া যাওয়া ডলারে ৪ লাখ বাদে বাকি সব অর্থই উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

ডেভিড স্মিথ

david smith দুনিয়া কাঁপানো সব সাইবার অপরাধী | Techtunes

ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া সর্বপ্রথম ভাইরাসটির শ্রষ্টা হতে চেয়েছিল স্মিথ। ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে বসে চুরি করা একটি এওএল (আমেরিকা অনলাইন) একাউন্ট থেকে একটি ওয়ার্ম ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে। ওয়ার্মটির নাম ছিল মেসিলা। যা পরবর্তিতে ইন্টারনেটে ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং প্রায় ৩০০টি বড় বড় কর্পোরেট প্রতষ্ঠানের নেটওয়ার্কে হামলা চালায়। এর মধ্যে মাইক্রোসফট, ইন্টেল, লুসেন্ট টেকনোলজির মত কোম্পানিও ছিল। গোটা আক্রমনট প্রায় ৮০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান ক্ষতি সাধন করে। তবে কাজটি করে বেশিদিন শান্তিতে থাকতে পারেনি স্মিথ। বিচারে তার লম্বা মেয়াদের কারাবাস হলেও পরে তা কময়ে নিয়ে আসা হয় মাত্র ২০ মাসে।

You can leave a response, or trackback from your own site.